স্বাধীন ইচ্ছা নাকি ভাগ্য?
আমাদের কি স্বাধীন ইচ্ছা আছে, নাকি আমরা নিজেদের বোকা বানাচ্ছি? আমরা যা চিন্তা করি এবং যা করি তা কি আমাদের মনের দ্বারা গঠিত? নাকি আমরা যা করি তা আমাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা পরিচালিত হয়? এমন কোনো সৃষ্টিকর্তা কি আছেন যিনি আগে থেকে পরিকল্পনা করে রেখেছেন আমরা কি করবো? অথবা সমস্যার দ্বারা আমাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে?
আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা কি কোন সুন্দর প্রলাপ?
যারা স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করে তারা আমাদের চিন্তা-ভাবনা এবং কর্মের জন্য অন্য ব্যাখ্যা খুঁজবে। আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে বস্তু ছাড়া আর কিছুই নেই, তাহলে আমাদের ক্রিয়াগুলি অবশ্যই আমাদের মস্তিষ্কে রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা চালিত হতে হবে। আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের কাছে উপস্থাপিত উদ্দীপনা এবং শরীরের চাহিদার প্রতি সাড়া দেয়।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের আবেগ ব্যাখ্যা করা কঠিন। তাহলে, কিভাবে আমরা সঠিক এবং ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি? আপনি যদি এই ধারণাটিকে পুরোপুরি গ্রহণ করেন, তাহলে একজন খুনিকে তার কর্মের জন্য দায়ী করা যাবে না। সর্বোপরি, এটি তার পরিস্থিতিতে তার মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া মাত্র…
সেই দৃষ্টিকোণ থেকে, এটা কিভাবে সম্ভব যে আমরা প্রেম করতে সক্ষম? কেউ কেউ তো তাদের প্রিয়জনের জন্য জীবন দিতেও রাজি? শুধু একটি রাসায়নিক ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়ার চেয়ে আমাদের মস্তিষ্কে আরও কিছু চলছে বলে মনে হচ্ছে। এটা কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে আমরা সুন্দর সঙ্গীত বা প্রকৃতি উপভোগ করতে পারি? এই বিষয়গুলি আমাকে বিশ্বাস করিয়েছিল যে জীবনের একটি আধ্যাত্মিক মাত্রাও থাকতে হবে।
আমরা কি শুধুই রোবট নাকি পুতুল?
একটি কম্পিউটার নিজের জন্য চিন্তা করতে পারে না। যেকোনো কিছু করার জন্য সফটওয়্যারের প্রয়োজন হয়। কিছু কম্পিউটার ব্যবহারকারী ছাড়া খুব ভালোভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারে। কিন্তু ফলাফল ডেভেলপার দ্বারা প্রোগ্রাম করা হয়ে থাকে। কম্পিউটার আপনাকে এমন সব ধরণের জিনিস তৈরি করতে দেয় যা আগে থেকে প্রোগ্রাম করা হয়নি।
আমি মনে করি আমাদের মস্তিষ্কের প্রক্রিয়াগুলির সাথে অনেক মিল রয়েছে। আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের অনেক অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, অথচ সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের চিন্তাও করতে হয় না। আমরা শ্বাস নিই, আমরা খাবার হজম করি, চোখ বুলিয়ে নিই এবং আরও অনেক কিছু করি। আবার, আমরা আমাদের মস্তিষ্ক দিয়ে আরও অনেক কিছুই করে থাকি। আমরা ভালবাসতে, শিখতে, সঠিক এবং ভুলের পার্থক্য বুঝে সিন্ধান্ত নিতে পারি।
সৃষ্টিকর্তা কি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন?
এই ওয়েবসাইটের মূল গল্পে, আপনি একজন স্রষ্টার অস্তিত্ব সম্পর্কে আরও আবিষ্কার করতে পারেন। আপনি যখন অধ্যয়ন করবেন যে কিভাবে বিশেষ ব্যক্তিদের একত্রিত করা হয় তখন আপনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারবেন না।
অনেক লোক ধরে নেয় যে আমরা যা করি তা আমাদের সৃষ্টিকর্তা আগেই ভেবে রেখেছিলেন। অতএব, এর অর্থ হবে যে স্রষ্টাও আমাদের চিন্তাভাবনা এবং কাজের জন্য দায়ী থাকবেন। কিন্তু বেশীরভাগ মানুষই সচেতন যে আমরা আমাদের কর্মের জন্য নিজেরাই দায়ী – অর্থাৎ আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
সবকিছুই ইঙ্গিত করে যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা আমাদের নিজের ইচ্ছানুসারে সিদ্ধান্ত নেবার কিছুটা হলেও স্বাধীনতা দিয়েছেন, যদিও সেই সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় তাঁর বিরুদ্ধে গিয়ে থাকে। এটি একটি শিশুর মতো যাকে শৈশবকালে ভুলগুলি করতে এবং শিখতে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়।
ভাগ্য কি আমাদের জীবন নির্ধারণ করে?
কখনও কখনও এটা ভাবতে বেশ স্বস্তিদায়ক মনে হয় যে আমরা যা করি তা ভাগ্য দ্বারা নির্ধারিত হয়। এতে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব কমে যায়।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের নিজেদের নিয়ন্ত্রনে সবকিছু নেই। অন্যান্য মানুষের সিদ্ধান্ত আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। পরিস্থিতি আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। এইসব কারণেরই খুব সহজেই আমাদের মনে হয় যে আমরা যা করছি তা কোন ব্যাপার না।
কম্পিউটারের উদাহরণটি মনে রাখবেন: এটি অনেক কিছু করতে পারে, তবে আপনি কোন প্রোগ্রামগুলি ব্যবহার করবেন, কোন ওয়েবসাইটগুলি দেখবেন এবং কি ধরণের ইমেল লিখবেন তা আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। একইভাবে, আপনি আপনার চিন্তাভাবনা এবং আপনার শরীরের সাথে যা করবেন তা আপনার দায়িত্ব।
আমাদের স্বাধীনতার সীমা
হয়তো, আমাদের আকাঙ্খা আমাদের ইচ্ছাকে সীমিত করে। কখনও কখনও আমরা কিছু করতে চাই বা না চাই, আমাদের শরীরের লালসা আমাদের ইচ্ছার চেয়ে শক্তিশালী প্রমাণিত হয়। আসক্তি এর একটি ভাল উদাহরণ।
এছাড়াও, আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা প্রকৃতির নিয়ম এবং পরিস্থিতি দ্বারা সীমাবদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যতই চাই না কেন উড়তে পারি না। জন্ম অথবা মৃত্যুর বিষয়ে আমরা কখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। কিংবা আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের পরিণতি এড়াতে পারি না।
তবুও, আপনার সিদ্ধান্তগুলি আপনার জীবন যাত্রা এবং চূড়ান্ত গন্তব্য নির্ধারণ করে। আপনি এই সাইটের মূল গল্পে এই সম্পর্কে আরও জানতে পারেন ।
আমাদের আকাঙ্খার প্রতি আসক্তি
যে বিষয়গুলো আমাদের কাছে উপভোগ্য এবং যা আমাদের জন্য ভালো, এই দুটি বিষয় থেকে যে কোন একটি বেছে নিতে আমাদের প্রায় সময়ই যুদ্ধ করতে হয়। আমি সত্যিই চকলেট পছন্দ করি, কিন্তু আমি জানি যদি আমি সারাদিন চকলেট খাই তাহলে এটা আমাকে মোটা করে তুলবে। আমরা প্রায়ই প্রলোভন এবং আমাদের সুস্থতার মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব অনুভব করি।
এটি শুধুমাত্র শারীরিক স্তরে ঘটে না। আধ্যাত্মিক স্তরেও, আমরা জেনে শুনে প্রায়ই এমন অনেক কাজ করি যা সৃষ্টিকর্তা অনুমোদন করেন না। তবুও আমরা প্রায়ই প্রলোভনের কাছে নত হই এবং ভালো কিছু করার জন্য অনেক চেষ্টা করতে হয়।
হয়তো, আমাদের সভাবগত কারণেই সেই সকল কাজ করে থাকি যা সঠিক নয়। শৈশব থেকেই, আমরা আমাদের নিজেদের মঙ্গলের কথাই চিন্তা করেছি। কোন মানুষই সম্পূর্ণরূপে সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ নয়। কেউই নিজের এবং অন্যদের জন্য সম্পূর্ণ মঙ্গল ভাব রাখতে পারে না। এটি করার মাধ্যমে, আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে অসম্মান করি এবং তাঁর প্রাপ্য সম্মান দিতে ব্যর্থ হই।
বিচার
আমাদের সবারই ন্যায়বিচারের বোধ আছে। ভালো কাজ পুরষ্কারের যোগ্য এবং মন্দ কাজ শাস্তির যোগ্য। অধ্যায় ৩ এ আমরা উপসংহারে পৌঁছেছি যে সৃষ্টিকর্তার একটি আবশ্যক বৈশিষ্ট হলো ন্যায়বিচার। তা না হলে তাঁর সৃষ্টিতে ন্যায়বিচার থাকবে না।
আমাদের ন্যায়বিচারের বোধ নিশ্চিত করে যে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন। যখন আমরা খারাপ কিছু করি, আমরা জানি যে অবশেষে এর পরিণতি কি হবে। আমরা আমাদের চারপাশের মানুষের কাছ থেকে আমাদের খারাপ কাজ এবং চিন্তা লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হতে পারি, কিন্তু আমরা আমাদের স্রষ্টার কাছ থেকে সেগুলি লুকাতে পারি না। অতএব, এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে অনেক ধর্মেও একটি ”শেষ বিচারের” বিষয়ে সচেতনতা রয়েছে। আমরা মারা যাওয়ার পরে, আমাদের সিদ্ধান্ত এবং কর্মের জন্য জবাব দিতে হবে৷
জীবন কি বড় পরীক্ষা?
কিছু লোক ধরে নেয় যে জীবন একটি বড় পরীক্ষা এবং আমাদের জীবনের শেষে সৃষ্টিকর্তা বিচার করবেন যে আমরা খারাপের তুলনায় ভাল কাজ বেশি করেছি কিনা। এই ধারণা সঠিক নয়। সর্বোপরি, আপনি কিভাবে হত্যার মতো মন্দ কাজের প্রতিশোধ নিতে পারেন? আমরা অনেক ভুল কাজ করি যা অপূরণীয় ক্ষতি করে।
আমাদের নাজাত প্রয়োজন!
তাহলে জীবন আসলে কি? বিষয়টি অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন আমরা স্রষ্টার উদ্দেশ্য জানি। তিনি আমাদের বিষয়ে প্রেমময় এবং অত্যন্ত ধৈর্যশীল।
এমনকি আপনি যখন একটি ভাল জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন তখনও প্রায়শই ব্যর্থ হয়ে থাকেন। তাই এই নিম্নগামী সর্পিল/downward spiral থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য দরকার। প্রত্যেক মানুষ একই সমস্যা নিয়ে সংগ্রাম করে থাকে। যার কারণে, কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারে না।
ভাগ্যক্রমে, সুখবর আছে! আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের সমস্যার সমাধান আছে। এই সমাধান আমাদের আকাঙ্ক্ষা এবং আত্ম-ধ্বংসাত্মক আচরণের পরিণতি থেকে চিরতরে মুক্ত করতে পারে। এই উপায় জানতে পড়তে থাকুন!
অথবা অধ্যায় ১ থেকে শুরু করুন যদি আপনি এই পৃষ্ঠা বাদ দিয়ে থাকেন
.