অধ্যায় ৩ ~ জীবনের ডিজাইনার

আমি খুশি যে আপনি এই অনুসন্ধানে আমার সাথে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একসাথে আমরা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো। আমরা এমন প্রশ্নগুলি নিয়ে চিন্তা করবো যা আপনি হয়তো কখনও চিন্তা করেননি৷

যদি একজন ডিজাইনার থাকে, জীবনের স্রষ্টা থাকে তবে কেন সবাই তাকে জানে না? আমরা যদি আমাদের স্রষ্টাকে দেখতে পেতাম তবে কি তাঁকে খুঁজে পাওয়া আরো সহজ হত না? আমাদের এই প্রশ্নের একটি সহজ উত্তর আছে। স্রষ্টার অবশ্যই একটি উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে, কেন তিনি নিজেকে প্রকাশ করেন না।

তারপরও প্রকৃতি ও মানুষের দিকে তাকিয়ে স্রষ্টার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করা সম্ভব। একটি ডিজাইন, ডিজাইনার সম্পর্কে কিছু প্রকাশ করে। প্রকৃতি এবং মহাবিশ্বের দিকে তাকালে আপনি ডিজাইনার সম্পর্কে কি আবিষ্কার করতে পারেন? এই অধ্যায়ে প্রকৃতি থেকে আমি আপনাকে ডিজাইনারের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখাতে চাই।

একজন সৃজনশীল ডিজাইনার

পৃথিবীতে জীবন প্রমাণ করে, ডিজাইনার খুব সৃজনশীল। শুধুমাত্র প্রকৃতির সমস্ত বিবরণের দিকে তাকান। আপনি দেখতে পারবেন যে, সবকিছু খুব মনোযোগ দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিটি গাছ-পালা, প্রাণী এবং মানুষ এতটাই জটিল যে, বহু শতাব্দীর গবেষণার পরেও বিজ্ঞানীদের এখনও অনেক কিছু আবিষ্কার করার বাকি আছে। আর মহাবিশ্বের বাকি অংশ? অগণিত নক্ষত্র ও গ্রহ রয়েছে। আবিষ্কার করার জন্য এ সমস্ত অনেক বেশি।

blank

আপনার কি মনে আছে যে, আমি যখন এই গল্পটি লিখতে শুরু করি তখন বাগানে ছিলাম, এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যে খুব বিস্মিত হয়েছিলাম। কোন প্রাণীই এক নয় এবং প্রকৃতির প্রতিটি অংশই দেখতে সুন্দর। প্রকৃতি শুধু সুন্দরই নয়, মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতিটি বৈশিষ্ট্যেরও কাজ আছে। সবকিছু একসাথে কাজ করে।

একটি ফুল কীটপতঙ্গ ছাড়া প্রজনন করতে পারে না এবং পোকামাকড় ফুল ছাড়া বাঁচতে পারে না। অনেক ফুলের সুন্দর রঙ থাকে যা দিয়ে তারা পোকামাকড়কে আকর্ষণ করে। নির্দিষ্ট ফুলের রূপ সেই কীটপতঙ্গের কাছে আকর্ষণীয় যারা তাদের পরাগ অন্য ফুলে নিয়ে যেতে পারে।

আমারা খাই এমন অনেক গাছের পরাগায়ন করে মৌমাছি এবং অন্যান্য পোকামাকড়। এসব মৌমাছি ছাড়া আমাদের খাবার হবে না। আমি শুধু মধুর কথা বলছি না। আমরা যে উদ্ভিদ খাই তার বেশিরভাগই মৌমাছির পরাগায়নের উপর নির্ভরশীল। এই ছোট, লোমশ পোকা ছাড়া আমাদের জীবন যাপন খুব আলাদা হবে।

এটি অগণিত উদাহরণের মধ্যে একটি মাত্র উদাহরণ যা দেখায় যে কিভাবে জীবনকে চালিয়ে নেয়ার জন্য সবকিছু একসাথে কাজ করে। জীবনের স্রষ্টা অবশ্যই অবিশ্বাস্যভাবে সৃজনশীল এবং দীপ্তিময় যিনি এই সমস্ত কিছু করতে সক্ষম।

একজন নির্ভরযোগ্য সৃষ্টিকর্তা

প্রতি রাতে যখন আমরা ঘুমাতে যাই, আশা করি কয়েক ঘন্টার মধ্যে আবার সূর্য উঠবে। আমরা ভয় পাই না যে এই অন্ধকার অবস্থা সব সময় থাকবে। আমরা এটাও জানি যে ঋতু প্রতি বছরই আসে এবং যায়। শরৎকালে আমরা জানি শীত আসছে এবং বসন্ত আসবে। প্রতি বছর বীজ বপনের এবং ফসল তোলার একটি মৌসুম রয়েছে।

আমরা দিন এবং রাত, গ্রীষ্ম এবং শীতের এই নিয়মিত ধারাগুলিতে বিশ্বাস করি। আমরা প্রকৃতির নিয়মের উপরও নির্ভর করতে পারি, যেমন মাধ্যাকর্ষণ। এই আইনগুলি অপরিবর্তনীয়। প্রকৃতির স্থির নিয়ম না থাকলে বিজ্ঞানের অস্তিত্ব থাকত না।

প্রকৃতিতে সবকিছু উদ্দেশ্য এবং প্রভাবের নির্দিষ্ট আদর্শ অনুযায়ী কাজ করে। এলোমেলো কিছু হয় না। একটি দিন সবসময় ২৪ ঘন্টা দীর্ঘ হয়, কখনও বেশি বা কম হয় না। আপনি যখন লাফ দেন তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আপনাকে সর্বদা নিচে টেনে আনে, কখনও উপরে টানে না।

প্রকৃতির নিয়ম যদি তার ইচ্ছামত চলতো, তাহলে আমরা বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তাম। পৃথিবীতে জীবন অসম্ভব হত এবং মহাবিশ্বের অস্তিত্ব থাকতো না।

স্রষ্টা শৃঙ্খলা এবং কাঠামোর, উদ্দেশ্য এবং প্রভাবের একজন স্রষ্টা। অতএব, এটা বলা নিরাপদ যে স্রষ্টা নির্ভরযোগ্য।

blank

প্রেম এবং সম্পর্কের একজন স্রষ্টা

আমাদের চারপাশের মানুষ ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। পৃথিবীর সমস্ত কাজ সক্ষম হওয়ার জন্য প্রকৃতিতে আমাদের একে অপরকে প্রয়োজন। আমাদের অন্য লোকেদের সাথেও সম্পর্ক দরকার। আমাদের পরিবার এবং প্রিয়জনদের সাথে বন্ধন শুধুমাত্র খাবার দাবারের জন্য নয়, তা প্রয়োজনের চেয়ে আরো গভীর বিষয়। মানুষের মধ্যে সম্পর্ক এবং ভালবাসা আমাদের অস্তিত্বের একটি বিশেষ অংশ গঠন করে। এসব বিষয় জীবনকে আরো অতিরিক্ত স্বাদ দেয়। তাই মানুষের মধ্যে প্রেম এবং সম্পর্কের জন্য সৃষ্টিকর্তার একটি উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আমরা এই বিষয়ে আরও একটু গভীরে ডুব দেবো।

সঠিক এবং ভুলের ভিত্তি

আপনি কি মনে করেন যে, স্রষ্টা এখনও তার সৃষ্টির সাথে জড়িত? নাকি আপনি মনে করেন যে, তিনি মহাবিশ্ব তৈরি করেছেন এবং তারপরে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন? আপনি যদি এই বিশ্বের সমস্ত দুঃখের দিকে তাকান তবে এটি কোন অবাক করা প্রশ্ন নয়।

ধরুন, সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। সেক্ষেত্রে, পৃথিবীতে দুঃখ-দুর্দশা কেন, এ প্রশ্নের উত্তর কি হবে? অথবা আপনি কি মনে করেন কোন কারণ ছাড়াই দুঃখ আছে? আর কেন কোন কিছু সঠিক বা ভুল হয়? কে সেটা নির্ধারণ করে? কোথাও একটা মান থাকতে হবে। থাকতে হবে একটা সাধারণ নিয়ম, একটা নৈতিক সত্য।

কেন একজন ব্যক্তিকে ‘মন্দ’ থেকে রক্ষা করা উচিত? প্রকৃতির নিয়ম ঠিক অথবা ভুল বিষয়টি নির্ধারণ করে না। এগুলো প্রকৃতির নিয়ম ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা সবসময় যা করে তাই করে। আপনি যখন লাফ দেন, আপনি জানেন মহাকর্ষ আপনাকে আবার নিচে টেনে নেবে। এতে ভাল মন্দ কিছু নেই।

ধরুন, সবকিছু উদ্দেশ্য এবং প্রভাব ছাড়া আর কিছুই নয়। তাহলে কিছু নির্বাচন করা সম্ভব হবে কি? আপনি যদি মনে করেন যে আমরা যা কিছু করি তা কেবলমাত্র ভৌত এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলাফল, তবে বিশ্বের দুর্দশা নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। আমরা যা করি তার জন্য নিজেদের দায়ী বোধ করার দরকার নেই। আমাদের কর্ম শুধুমাত্র আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলাফল হবে। এছাড়া আর ভিন্নভাবে চিন্তা করার উপায় আছে কি?

যদি কোনো নিরপেক্ষ ‘সঠিক’ বা ‘ভুল’ না থাকে, তাহলে কেন আমরা হত্যা, ধর্ষণ, ব্যভিচার বা মিথ্যাকে ভুল বলবো? একটা পরম সত্য থাকতে হবে। সেই সত্য সৃষ্টির গভীরে গাঁথা আছে এবং সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে আসে।

আপনিও কি এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আগ্রহী যে কেন সৃষ্টিকর্তা আমাদের সৃষ্টি করেছেন?

blank

.

সারসংক্ষেপ